সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ। তবে এই ব্যবস্থা অবিলম্বে নয়, চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শিশির মনির।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শিশির মনির বলেন, “আজ থেকে ৪১ বছর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিনের উত্তাল রাজনৈতিক পরিক্রমায় অবশেষে জাতি বুঝতে পেরেছে, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজনীয়।”
তিনি আরও বলেন, কেয়ারটেকার সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘পিলার’। এই ব্যবস্থা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা কঠিন। তিনি জানান, রায়ে পূর্বের বাতিলকৃত রায়কে ‘কলঙ্কিত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং নতুন রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হলো।
শিশির মনির জানান, রায়ে বলা হয়েছে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। তবে বর্তমানে সংসদ না থাকায় এই ব্যবস্থা এখনই কার্যকর হচ্ছে না। চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এটি বাস্তবায়ন হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় মেনে নেওয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। “আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে চাইনি। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন আয়োজনই আমাদের লক্ষ্য ছিল। অবশেষে আমরা সেই জায়গায় ফিরে এসেছি।”
আইনজীবী শিশির মনির আরও জানান, জুলাই চার্টারে দেওয়া চারটি অপশন যদি গণভোটে পাস হয়, তাহলে নতুন পার্লামেন্টে সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামোয় পরিবর্তন আনা হতে পারে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন।
বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা ছিলেন-বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
রায়ে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, আর চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরায় কার্যকর হবে।
