রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। রাজউক ৪২টি ভবন ভেঙে ফেলা এবং ১৮৭টি ভবন সংস্কারের নির্দেশনা দিলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তা মানছে না। সম্প্রতি ভূমিকম্পের পরও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, ভবনগুলোর দেয়াল, বিম ও ছাদে বড় বড় ফাটল, বারান্দায় খসে পড়া পলেস্তারা-এসব যেন প্রতিদিনের ঘটনা। জবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ল্যাব, ভাষা শহীদ রফিক ভবন, অবকাশ ভবনসহ চারটি ভবনকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে শনাক্ত করা হলেও সেখানে চলছে নিয়মিত ক্লাস-ল্যাব। সম্প্রতি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ল্যাবের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হন একজন কর্মচারী।
শিক্ষার্থীরা জানান, প্রায় সময়ই ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে, দেয়ালে ফাটল দেখা যায়। এতে ভয় নিয়েই ক্লাস করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, “আগে তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সরাসরি ক্লাস বন্ধ করে অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়েছে। ভবনগুলোর সংস্কারের পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন।”
একই পরিস্থিতি কবি নজরুল সরকারি কলেজসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে। ২০২৩ সালে ‘আরবান রেজিলিয়েন্স’ প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর ২ হাজার ৭০৫টি শিক্ষা ভবনের জরিপ করে ১৮৭টি ভবন রেট্রোফিটিং এবং ৪২টি ভবন ভেঙে ফেলার সুপারিশ করেছিল রাজউক। তালিকায় পিজি হাসপাতালের তিনটি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি, মাদ্রাসা বোর্ডের তিনটি ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্মিত ৩০টি ভবন রয়েছে।
তবে এসব ভবন আজও ব্যবহৃত হচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রাজউক শুধু তালিকা তৈরি করে দায়িত্ব শেষ করেছে; বাস্তবায়নে নেই তদারকি ও আইনি কঠোরতা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে। এগুলো অবিলম্বে ব্যবহারের বাইরে রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে রাজউককে আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভবন ভাঙতে হবে।”
রাজউক জানায়, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বহুবার চিঠি দেওয়া হলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে।
শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু জরিপ বা তালিকা নয়, জীবন রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নই এখন সবচেয়ে প্রয়োজন।
