নির্বাচনী জোট নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ধোঁয়াশা বাড়ছে

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোট ও আসন সমঝোতা এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। দীর্ঘদিন পর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলই নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে তৎপর। তবে সম্ভাব্য জোট কাঠামো নিয়ে বেশ কয়েকটি দলে দেখা গেছে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ ও অনিশ্চয়তা।

দীর্ঘদিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনে কার্যকর জোট রাজনীতির অভাব থাকলেও নতুন পরিস্থিতিতে দলগুলো আবারও জোট গঠনে সক্রিয় হয়েছে। বর্তমানে রাজনৈতিক ময়দানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট উদ্যোগ। শেখ হাসিনা বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিক দলগুলোকে নিয়েই নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

অন্যদিকে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে রাজপথে থাকা সাত দলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী সমঝোতাও এগোচ্ছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশ জাসদ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চাও নতুন জোট গঠনের পথে হাঁটছে।

এদিকে জোটবদ্ধ হওয়া নিয়ে তীব্র মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিতে। এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদকে নিয়ে নতুন জোট গঠনের গুঞ্জন থাকলেও তা এখন প্রায় অনিশ্চিত পর্যায়ে। ফলে দলটির সামনে প্রশ্ন-স্বতন্ত্র মধ্যপন্থী জোট নাকি বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা?

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আলাদা জোট গঠনে অন্তত ১০টি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তার ভাষ্যে, “দেশের স্বার্থকে সামনে রেখে যেকোনো জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে-বিএনপি বা জামায়াত-উভয়ের সঙ্গেই আমাদের আলোচনার দরজা খোলা।”

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের আদলে নতুন জোট গঠনের কথা জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “আমরা শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, আন্দোলন ও সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একটি নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি।”

এদিকে শরিকদের আসন ছাড়ে যথেষ্ট যাচাই-বাছাইয়ের কথা বলছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “যেখানে যে দলকে দিলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেখানেই আসন ছাড়ব। আমাদের কর্মীরাও প্রার্থীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।” তিনি জানান, আট-দলীয় সমন্বয় কমিটির আলোচনাও চূড়ান্ত পর্যায়ে।

তফসিল ঘোষণার পর শরিকদের জন্য আসন চূড়ান্ত করবে বিএনপি, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তার ভাষায়, “বিএনপি মূলধারার রাজনীতিতে রয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে যেসব দলের সঙ্গে আমরা ছিলাম, সরকার পরিচালনায়ও আমরা তাদের সঙ্গেই থাকব।”

ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার লক্ষ্যে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের মাধ্যমে কমিশন নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

জোট কাঠামো এখনও অস্পষ্ট হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঘোষিত তফসিলই স্পষ্ট করবে কোন দল কার সঙ্গে যাচ্ছে এবং কতটা প্রভাব ফেলতে পারে নতুন এই সমীকরণ।

Read Previous

সংসদ নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে, আশা সিইসির

Read Next

এই সময়ে পেয়ারা খাবেন যে ৫ কারণে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Most Popular