
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ব্রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অসংগতি থাকার কারণেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় কমিশন। সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার ড. মোহ্সীন আহসান তফসিল স্থগিতের ঘোষণা দেন।
কমিশনার ড. মোহ্সীন আহসান বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ আয়োজনের জন্য ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৭ নভেম্বর মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরুর কথা থাকলেও হলভিত্তিক শিক্ষার্থীদের তালিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেওয়ায় তা এক কার্যদিবস পিছিয়ে ৩০ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে আজ ১ ডিসেম্বর সোমবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ চলছে। তফসিল কার্যকর করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে হলভিত্তিক সঠিক, হালনাগাদ ও ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা পাওয়া অত্যাবশ্যক। কে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কে কোন হলে থাকে, কার ভর্তি বাতিল হয়েছে, কোন অপরাধের কারণে কার ছাত্রত্ব বাতিল হয়েছে- এসব নির্ভুল তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই কমিশনকে দিতে হবে। এসব তথ্যে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব সিদ্ধান্তের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে, নির্বাচন কমিশন হলভিত্তিক ভোটার তালিকা চেয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করার পর যে তালিকা ও হল-সংযুক্তির নথিপত্র দেওয়া হয়েছে, তাতে একাধিক গুরুতর অসংগতি, ভুল তথ্য ও অসম্পূর্ণতা পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় ভুল তথ্যসমৃদ্ধ ভোটার তালিকার ভিত্তিতে মনোনয়নপত্র বিতরণ ন্যায়সংগততা, স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার পরিপন্থী হবে। নির্বাচন কমিশনের মনে হচ্ছে, হলভিত্তিক ভুল ভোটার তালিকা পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, এর ভিত্তিতে মনোনয়নপত্র বিতরণ করলে প্রার্থীদের বৈধতা নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে। ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা সংশোধন না করে নির্বাচন কার্যক্রম চালানো মোটেই সম্ভব নয়। যেসব দপ্তর ভুল তথ্য দিয়ে এসব নথি কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে, তাদের কোনো ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের সামনে কমিশনকে হেয় করার উদ্দেশ্য নিয়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হলভিত্তিক ভোটার তালিকার সব অসংগতি দূর না হওয়া পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণসহ তফসিলের অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। কমিশন জরুরি ভিত্তিতে রেজিস্ট্রার অফিসকে আহ্বান জানাচ্ছে- হলভিত্তিক তালিকার সব ভুল, বাদ পড়া নাম, দ্বৈততা ও অসামঞ্জস্য দ্রুত সংশোধন করতে হবে। সংশোধিত ও যাচাইকৃত ভোটার তালিকা দ্রুত নির্বাচন কমিশনের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে কোনো বিলম্ব ছাড়াই নির্বাচন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা যায়। কমিশন স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। সঠিক তথ্য ও নথিপত্র পাওয়ার আগ পর্যন্ত কমিশন কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়া চালু রাখবে না।
এ বিষয়ে বেরোবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কোনো দপ্তর যদি নির্বাচনে বাধা তৈরি করে, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। নির্ভুল ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার জন্য সব দপ্তরকে অনুরোধ করছি। নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে পারবে।
