জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যারা দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে, তারা শহীদ শরিফ ওসমান হাদির আদর্শ ধারণ করে না। বরং তারা চলমান আন্দোলন ও বিক্ষোভকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরপরই রাজধানীর শাহবাগে জড়ো হন ছাত্র-জনতা। সেখানে উপস্থিত হয়ে নাহিদ ইসলাম জনগণের প্রতি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এবং আন্দোলনের ভেতরে পরিকল্পিত নাশকতা নিয়ে সতর্ক করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন,
“আমাদের গন্তব্য কী, আমাদের লক্ষ্য কী-এই প্রশ্ন আমাদের নিজেদেরই করতে হবে। শরিফ ওসমান হাদি ভাই কী প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন? তিনি ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশপন্থী এবং আধিপত্যবাদ-বিরোধী সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের জন্য। আমাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান, নিজস্ব মিডিয়া এবং নিজস্ব কালচারাল সেন্টার গড়ে তুলতে হবে।”
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে বলেন,
“আজ রাতে আমরা দেখেছি প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই-যারা এই কাজ করেছে, তারা শরিফ ওসমান হাদি ভাইকে ধারণ করে না।”
তিনি বলেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার নিয়ে সমালোচনা ও রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকতেই পারে, তবে সেই মোকাবিলা করতে হবে আদর্শভিত্তিক ও বিকল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে-সহিংসতা দিয়ে নয়।
“যখন পুরো বাংলাদেশ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা, তখন পরিকল্পিতভাবে দেশকে বিভাজিত করার চেষ্টা চলছে,” বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল ও হটকারী হিসেবে উপস্থাপন করতেই এই ধরনের হামলা চালানো হচ্ছে।
“এই অপচেষ্টা যাতে আমাদের আন্দোলনকে দুর্বল করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। শরিফ ভাইকে গুলি করার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান ও আন্দোলন চলমান থাকবে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন,
“আমরা সব ধরনের সমালোচনা গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে করব। মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে হামলার নিন্দা জানাচ্ছি এবং জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। যারা আগুন লাগাচ্ছে, তারাই প্রকৃতপক্ষে আন্দোলন-বিরোধী অবস্থান নিচ্ছে।”
বক্তব্যের শেষে নাহিদ ইসলামসহ উপস্থিত ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্লোগান দেন—
“ইনকিলাব জিন্দাবাদ”,
“দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা”,
“জনতা জনতা, আপস না সংগ্রাম”,
“গোলামি না আজাদি”।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত দৈনিক প্রথম আলো এবং তেজগাঁওয়ের তেজতুরি পাড়ায় অবস্থিত ডেইলি স্টারের প্রধান কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায় বিক্ষুব্ধ একটি দল। পরে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ভবনের ছাদে আটকে পড়া কর্মীদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।
প্রসঙ্গত, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন ওসমান হাদি। ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরিবারের সিদ্ধান্তে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
