এবারের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রংপুরের মেধাবী যমজ দুই বোন হাফসা ইসমাত নাজাহ ও হাজ্জা ইসমাত নুবাহ। একইসঙ্গে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে তারা গড়েছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। নাজাহ সুযোগ পেয়েছেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে এবং নুবাহ ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন নীলফামারী মেডিকেল কলেজে।
একই দিনে জন্ম নেওয়া এই যমজ দুই বোনের এমন যুগল সাফল্যে খুশির বন্যা বইছে তাদের পরিবার ও এলাকায়। রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মণ্ডল পরিবারে জন্ম নাজাহ ও নুবাহর। তাদের বাবা মোতাহার মণ্ডল এবং মা শাহানাজ বেগম।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নাজাহ ও নুবাহ মিঠাপুকুর মডেল সরকারি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে আসছিলেন তারা। তারই ধারাবাহিকতায় এবার দেশের অন্যতম কঠিন ও প্রতিযোগিতামূলক মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করলেন দুই বোন।
এদিকে নিশ্চিন্তপুর গ্রামে মণ্ডল পরিবারে এখন উৎসবের আমেজ। সাধারণ গ্রামীণ পরিবেশ থেকে উঠে এসে দুই বোনের এই অভাবনীয় সাফল্য শুধু তাদের পরিবারের জন্য নয়, বরং পুরো মিঠাপুকুর উপজেলা ও রংপুর জেলার জন্য গর্বের বিষয় বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। তাদের মতে, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো বাধাই সাফল্যের পথে অন্তরায় হতে পারে না-এটি প্রমাণ করেছেন নাজাহ ও নুবাহ।
মেয়েদের এমন সাফল্যে আবেগাপ্লুত বাবা মোতাহার মণ্ডল বলেন, “আমার দুই মেয়ে ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল। তাদের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা। আল্লাহ তায়ালা সেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি সবার কাছে ওদের জন্য দোয়া চাই-ওরা যেন ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে।”
যমজ বোনদের দাদা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শাজাহান আলী মণ্ডল বলেন, “আমাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল কেউ চিকিৎসক হোক। আমার এই দুই নাতনি সেই প্রত্যাশা পূরণ করেছে। আমরা সবাই খুব খুশি। সবার কাছে তাদের জন্য দোয়া চাই।”
রংপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ফিরোজুর রহমান বলেন, “রংপুর সরকারি কলেজ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে বরাবরই ভালো ফল করে আসছে। প্রতিবছর আমাদের কলেজ থেকে অনেক শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। নাজাহ ও নুবাহর এই সাফল্য আমাদের সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। তাদের অর্জন আমাদের গর্বিত করেছে।”
ভবিষ্যতে ভালো চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চান নাজাহ ও নুবাহ। আল্লাহ তায়ালা তাদের দ্বীন ও দুনিয়া উভয় জগতেই কামিয়াবি দান করুন-এমনটাই প্রত্যাশা পরিবার ও এলাকাবাসীর।
