আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে চাইছে বিএনপি। তবে প্রতীক-সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতার কারণে দলটি কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন অনুযায়ী, জোট গঠন করা হলেও নিবন্ধিত প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নিজ নিজ প্রতীকেই ভোটে অংশ নিতে হবে। এই বিধানকে ছোট দলগুলোর জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মনে করছে বিএনপি এবং তাদের শরিকরা।
বিএনপি সূত্র জানায়, জোটবদ্ধ নির্বাচনে একক প্রতীকে ভোট করা না গেলে ছোট দলগুলোর প্রার্থী জয়ের সম্ভাবনা কমে যায়। কারণ ভোটারদের বড় দলমুখী প্রবণতা থাকে এবং জোটগত সমর্থন ছড়িয়ে যেতে পারে। ফলে শরিকদের নির্বাচনী শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইতিমধ্যে কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আরপিওর ২০ (১) ধারায় আনা প্রতীক-সংক্রান্ত সংশোধনী বাতিলের দাবিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে। বিএনপিও একই দাবি তুলে সংশোধনী পরিবর্তনে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। দলটির প্রত্যাশা-ছোট দলগুলোও এই দাবিতে সরব হবে, যাতে যৌথ চাপ তৈরি হয়।
অন্যদিকে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য আসন বণ্টন এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। দলটির সংশ্লিষ্ট নেতারা বিভিন্ন শরিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। সূত্র বলছে, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আসন-সমঝোতা বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে মিত্র দলগুলোর ‘উচ্চ চাহিদা’ ও মাঠপর্যায়ে জটিলতা বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, আসন সমঝোতা জটিল হলেও প্রতীকের সমস্যা আরও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা জোটবদ্ধ নির্বাচনে প্রতীক এক করার আশা করেছিল। সংশোধিত আরপিও সেই সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
নেতাদের ভাষ্য, প্রতীকের বিধান অপরিবর্তিত থাকলে জোটের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণ ঝুঁকিতে পড়বে। ফলে বিএনপি এখন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উভয় পর্যায়ে সংশোধনী ফেরানোর চেষ্টা জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জোটবদ্ধ নির্বাচনে প্রতীক সংকট বিএনপিকে নতুন করে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে ফেলেছে। আসনসমঝোতা, শরিকদের দাবি এবং আরপিও সংশোধনী-সব মিলিয়ে দলটি সামনে একটি কঠিন সিদ্ধান্তের পথ দেখছে।
