আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৯ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে জয়ের জন্য ১৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪২ রানেই থামে স্বাগতিকদের ইনিংস। জয়ের জন্য দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে তুলতে পারলে ভালো হত, কিন্তু এমন ম্যাচে ব্যাট হাতে কেউই শক্তি দেখাতে পারেননি।
১৮ রানে ৪টি আর ৭৪ রানে নেই ৮ উইকেট। ১৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা বাংলাদেশের হার নিশ্চিত হয়ে গেছে তখনই। সেখানে দাঁড়িয়ে একাই লড়লেন তাওহিদ হৃদয়। এই লড়াইয়ে অবশ্য দলের পরাজয়ের ব্যবধান কমা ছাড়া তেমন কোনো উপকার হলো না।
টেস্ট সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পর টি-টোয়েন্টিতে দুঃস্বপ্নের শুরু হলো বাংলাদেশের। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আইরিশদের কাছে ৩৯ রানে হেরেছে টাইগাররা। এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০’তে এগিয়ে গেলো সফরকারী দল।
প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৮১ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করায় আয়ারল্যান্ড। জবাবে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪২ রানে থামে বাংলাদেশ।
১৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা বাংলাদেশকে স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করে আয়ারল্যান্ড। কাজও হয়। ম্যাথিউ হামপ্রিসের বলে মিডঅনে ক্যাচ তুলে দেন তানজিদ হাসান তামিম (৫ বলে ২)।
পরের ওভারে হামপ্রিস তুলে নেন লিটন দাসকেও। বাংলাদেশ অধিনায়ক ৩ বলে করেন ১ রান। পারভেজ হোসেন ইমন ৬ বলে ১ করে হন মার্ক এডায়ারের শিকার। বাউন্সার ডেলিভারিতে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন বাংলাদেশি ওপেনার। ৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের দুর্দশা আরও বাড়ে ম্যাকার্থির বলে সাইফ হাসান (১৩ বলে ৬) বোল্ড হলে। ১৮ রানে ৪ উইকেট হারায় টাইগাররা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৪ উইকেটে মোটে ২০ রান তুলতে পারে স্বাগতিক দল।
সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন তাওহিদ হৃদয় আর জাকের আলী। পঞ্চম উইকেটে ৩৪ বলে ৪৮ রান যোগ করেন তারা। জাকের বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন ১৬ বলে ২০ করে। ৬৬ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরই কার্যত সব আশা ভরসা শেষ হয়ে যায়।
এরপর তানজিম হাসান সাকিব ৫, নাসুম আহমেদ ০ রানে সাজঘরে ফেরেন। একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন তাওহিদ হৃদয়। ৩৪ বলে ফিফটি পূরণ করেন তিনি। তবে ততক্ষণে বাংলাদেশের বড় হার নিশ্চিত হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত ৫০ বলে ৭ চার আর ৩ ছক্কায় ৮৩ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। এটিই টি-টোয়েন্টিতে তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস।
আয়ারল্যান্ডের ম্যাথিউ হামপ্রিস মাত্র ১৩ রানে ৪টি আর বেরি ম্যাকার্থি ২৩ রানে নেন ৩টি উইকেট।
এর আগে চট্টগ্রামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ৪ উইকেটে ১৮১ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করায় আয়ারল্যান্ড।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেনেন্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। শরিফুল ইসলাম আর নাসুম আহমেদকে দিয়ে দুই প্রান্ত থেকে আক্রমণ শুরু করেন তিনি। কিন্তু আয়ারল্যান্ডকে বিপদে ফেলা যায়নি।
শুরু থেকেই ঝড় তোলেন আইরিশ দুই ওপেনার পল স্টার্লিং আর টিম টেক্টর। ৪ ওভারে ৪০ রান তুলে ফেলেন তারা। পঞ্চম ওভারে তানজিম হাসান সাকিবকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। বল হাতে নিয়েই দ্বিতীয় বলে উইকেট।
পল স্টার্লিং বড় শট খেলতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন। মিডউইকেটে ক্যাচ নেন সাইফ হাসান। ১৮ বলে ২১ করে ফেরেন আইরিশ অধিনায়ক।
রিশাদ হোসেন নিজের প্রথম ওভারে ভালো করতে পারেননি (১৪ রান)। তবে পরের ওভারেই তুলে নেন টম টেক্টরকে। লংঅনে তানজিদত হাসান তামিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টেক্টর (১৯ বলে ৩২)।
প্রথম দুই ওভারে মার খাওয়া শরিফুল নিজের তৃতীয় ওভারে দারুণ বল করেছেন। মাত্র ৩ রান দিয়ে তুলে নেন লরকান টাকারের উইকেট। ১৪ বলে ১৮ করেন আইরিশ ব্যাটার।
চতুর্থ উইকেটে ২৯ বলে ৪৪ রান যোগ করেন হ্যারি টেক্টর আর কুর্তিস ক্যাম্ফার। তানজিম সাকিবের বলে ক্যাম্ফার (১৭ বলে ২৪) আউট হন পারভেজ হোসেন ইমনের অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে। ডাইভ দিয়ে বাজপাখির মতো ক্যাচটি তালুবন্দি করেন ইমন।
এদিকে, ৩৭ বলে ফিফটি তুলে নেন হ্যারি টেক্টর। ৪৫ বলে ১ চার আর ৫ ছক্কায় শেষ পর্যন্ত ৬৯ রানে অপরাজিত থাকেন টেক্টর। তার ব্যাটে চড়েই চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় আইরিশরা। জর্জ ডকরেল অপরাজিত ছিলেন ৭ বলে ১২ রানে।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এক মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া সবাই ছিলেন খরুচে। মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। তানজিম সাকিব ২ উইকেট পেলেও খরচ করেন ৪১ রান। শরিফুল ইসলাম ৪২ রানে এবং রিশাদ হোসেন ৩৪ রানে একটি করে উইকেট নেন ।
